মোহাম্মদ ইব্রাহিম মোস্তফা, নির্বাহী সম্পাদক-উখিয়া বার্তা::
হাতে গাঁদা আর গোলাপ ফুল নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন শিক্ষার্থীরা। বিদায় সংবর্ধনা শেষে মঞ্চ থেকে অতিথিদের সঙ্গে বাইরে এলেন তাঁদের প্রিয় শিক্ষক। বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে তাকে অশ্রুশিক্ত নয়নে সুসজ্জিত একটি প্রাইভেট কারে তুলে দিলেন শিক্ষার্থীরা। বিদায়বেলার এমন আয়োজনে আবেগ-আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন উখিয়া উপজেলার থাইংখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের সবার প্রিয় বিদায়ী প্রধান শিক্ষক এম এ আব্দুর রহিম হেলালী।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী উচ্চ বিদ্যালয়ে দিনব্যাপী বিদায়ের নানা আনুষ্ঠানিকতার শেষে বিকালে সুসজ্জিত একটি প্রাইভেটকারে সবার প্রিয় এই শিক্ষককে বাড়ি পৌঁছিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।
উক্ত বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অত্র প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অত্র প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র শিক্ষক কামরুদ্দিন মুকুলের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ উল্লাহ, উপজেলা একাডেমিক সুপার ভাইজার বদরুল আলম, অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শামশুল আলম সওদাগর, মাষ্টার ফরিদ আহমদ, প্রতিষ্টাতা সদস্য হাফেজ শাহ আলম, মোজাফফর আহমদ সওদাগর।
এসময় বক্তারা বলেন, তিনি অনেক ভালো ও উদার মনের মানুষ। শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ প্রিয় ছিলেন। কখনো রাগ বা ক্ষোভ দেখিনি। পিতার মতো শিক্ষার্থীদের পড়িয়েছেন। আমার কর্ম জীবনে এমন শিক্ষক পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছি। তিনি এতো উদার মনের মানুষ, কোনো শিক্ষকের বিপদ হলে সঙ্গে সঙ্গে যেতেন এবং খোঁজ খবর নিতেন। স্যার অবসর জনিত কারণে বিদায় নিয়েছেন। এটি সবাইকে মানতেই হবে। আমরা স্যারের দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা করছি।
আয়োজকরা জানান, স্কুল প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে প্রধান শিক্ষক এম এ আব্দুর রহিম হেলালী তার কর্মজীবনে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। এ প্রথম কোনো বিদায়ী শিক্ষককে জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। তার এ বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
বিদায়ী সংবর্ধিত প্রধান শিক্ষক এম এ আব্দুর রহিম হেলালী বলেন, ‘আজ আমি নিজেকে সার্থক মনে করি। একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে আমার সকল শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রী আমাকে বিদায় সংবর্ধনা দিয়েছে। এ বিদ্যালয় থেকে এর-আগে আর কোনো শিক্ষক সংবর্ধিত হয়নি। তাদের প্রতি আমার ভালোবাসা কখনও শোধ করা সম্ভব নয়। আমি সবসময় ছেয়েছি তাদেরকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে। আজ তারা আমাকে আদর্শ মানুষ হিসেবে পরিচয় দিয়েছে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজিত সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ।’
তিনি আরও বলেন, এ প্রতিষ্ঠান চালাতে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে অনেক কু-চক্রী ষড়যন্ত্র করেছিল। সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে এ প্রতিষ্ঠান সুনামের সঙ্গে চালিয়েছি। এ বিপদে আমার সহকর্মীরা পাশে ছিলেন। আমার শিক্ষক ও শিক্ষিকারা অনেক ভালো মনের মানুষ। তারা আমার এ প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনে সর্বত্র দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। সেজন্য তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান, বালুখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সবুজ সেন, ভালুকিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফুর রহমান মানিক, থাইংখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহাব উদ্দিন আহমদ, রহমতের বিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজ উল্লাহ, সোনার পাড়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মিকু বড়ুয়া, প্রাত্তন ছাত্র ইঞ্জিনিয়ার সালাহ উদ্দিন ও আরিফ মামুন, ছাত্র ছাত্রীদের পক্ষে ইশফা মনি ও রাহাত বিল্লাহ৷ সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিনিয়র শিক্ষক প্রিয়শেন বড়ুয়া অন্যান্যদের উপস্থিত ছিলেন দাতা সদস্য আবুল মনজুর সিদ্দিকী, থাইংখালী দাখিল মাদ্রাসা সুপার আমিনুল ইসলাম এহসান, রহমতের বিল দাখিল মাদ্রাসার সুপার ফজলুল করিম, ডাক্তার কামাল উদ্দিন, মাষ্টার মুজিবুল হক, মাষ্টার নুরুল আকতার সিকদার, মিছবাহ উদ্দিন, সেলিম মেম্বার আলতাজ আহমদ মেম্বার, কামাল উদ্দিন মেম্বার, মুহিদুল আলম সিকদার মেম্বার, নুরুল আমিন মেম্বার, জয়নাল আবেদীন মেম্বার সহ প্রাক্তন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
পাঠকের মতামত: